- এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলে?
- যার সাথে ইচ্ছা হয়, বলছি.....
- এমন করছো কেনো?
- সবকিছুই তোমাকে বলতে হবে?
- না। সেইরকম না। একটু টেনশন হচ্ছিল।
- বাসা থেকে ফোন দিয়েছিল।
- সত্ত্যি কথা বললে তো?
- আমি অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলল্লে
তোমার কোন সমস্যা?
- হ্যাঁ, অবশ্যই আমার সমস্যা।
- থাক। আর ভালবাসা দেখাতে হবে না।
- কাল একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবে?
- না। পারবো না।
- আমাকে আর ভালবাসো না?
- বাই।
.
"বাই" বলেই ফোনটা কেটে দিল তামান্না।
বুঝতেছি না আমার দোষটা কোথায়? ও আমার
সাথে এমন করছে কেনো? এসব কিছু একদমই মেনে
নিতে পারছিলাম না। সবকিছুই মনে হয় শেষ
হয়ে যাচ্ছে।রাতে কাঁন্না করে চোখ গুলো
ফুলে গেছে। ১ বছরের রিলেশন আজ কোন
কারনে নষ্ট হতে চলেছে! ঐ দিন রাতে চোখ
দুইটা শুধু অশ্রু বিসর্জন করেছে। বাহিরে কী সুন্দর
চাঁদ! চাঁদ দেখতেছি, তারপরেও মনকে ভাল
করতে পারছি না। সবকিছু ভাবতে ভাবতে ভোর
হয়ে গেছে। চোখে একটু একটু ঘুম।
.
ঘুম থেকে উঠে নিজেই আবার তামান্নাকে
ফোন দিলাম।
- আমার কথা গুলোর প্লিজ একটু উত্তর দিবে?
- হুম। বলো?
- কেনো আমার সাথে এইরকম করতেছো?
- তোমার আব্বু কী করেন?
- হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে কেনো?
- যা বলছি,,,ঠিক ঠাক উত্তর দাও।
- হুম আব্বু তো একটা হাই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর
কর্মচারী।।
- এই কথা আমাকে আগে বলো নি কেনো?
- বলার মত কোন পরিস্থিতি হয় নি,তাই।
- কালকে তোমার ছোট বোনের কাছ থেকে সব
শুনছি।
- ওহহহ। (এবার একটু একটু বুঝে আসতেছে)
- তুমি কী জানো,,আমার বাবা একজন প্রথম
শ্রেণীর কর্মকর্তা?
- হ্যাঁ,,,জানি তো।
- তোমার নিজস্ব কোন বাইক আছে?
- না। কেনো বলতো??
- এমনি।
- আমাদের ভালবাসার মাঝখানে তুমি এগুলা
কেনো টেনে আনতেছো?
- আমার একটু কাজ আছে, বাই। ভাল থেকো!
.
তামান্নাকে আগে কখনো এই রূপে দেখি নি।
মধ্যেবিত্ত পরিবারে জন্মেছি বলে কী আমরা
কাউকে ভালবাসতেও পারবো না? বিধাতা
তোমার এ কী পরীক্ষা!
সেই দিনের পর থেকে তামান্না আর আমার
সেই আগের তামান্না নেই। নিজের উপর খুব রাগ
হচ্ছে,, কেনো মধ্যেবিত্ত ফ্যামিলিতে
জন্মেছিলাম! আজ যদি ডাক্তারের ছেলে
হতাম, তাহলে তামান্নাকে হারাতে হতো
না।
.
এখনও তামান্নার সাথে সেসরার মত
যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কীভাবে এত
সহজে ভুলবো আমি তামান্নাকে? কিন্তু, পাঁচ
দিন হল, তামান্নার কোন খবর পাই না। এখন আর
আমার সাথে কথাও বলে না। ফোন দিলে সবসময়
সুইচ অফ দেখায়। পৃথীবির সব কিছু এলোমেলো
লাগতেছিল। প্রতিটা রাত চোখের জলে
বালিস ভিজিয়ে দিচ্ছে।
.
পরের দিন কলেজে ক্লাস শেষ করে, একটু
ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে যাবো, তখনই
দেখি তামান্না একটা ছেলের সাথে হাত
ধরে বসে গল্প করছে। ওদের দেখে চোখের
জলকে সেদিন আর আটকে রাখতে পারছিলাম
না।
- কি রে বন্ধু, তুই কাঁদছিস কেনো? ( সবীজ)
- কই না তো!
- তাহলে, তোর চোখে পানি কেনো?
- আরেহ্ এমনি। চল, অন্যদিকে যাই।
- অন্যদিকে যাবি মানে? এটাই তো আড্ডা
দেওয়ার জায়গা।
- না রে, ভাল লাগছে না। তোরা থাক, আমি
যাই।
- কী হইছে বলবি তো?
.
হুম ঐ দিনের পর থেকে আমি আর কখনও তামান্নার
সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি নি। মনে
মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, জীবনে বড় কিছু
হয়ে তামান্নাকে দেখাবো। একবার ইচ্ছা
করছিল ছেলেটাকে ধরে ইচ্ছামত ধোলাই
দিতে! কিন্তু, আবার মনে হচ্ছিল, ছেলেটার
তো কোন দোষ নাই। সব দোষ ঐ বড়লোক মাইয়ার।
.
কিছুক্ষণ পর দেখি, ছেলেটা আমাদের দিকেই
আসতেছে, আর তামান্না অন্য পাশ দিয়ে বের
হয়ে যাচ্ছে।
- ভাইয়া?
- জ্বী.... বলুন?
- তামান্না তোমার কে হয়?
- না ভাইয়া ইয়ে.....
- হুম। বুঝেছি। কত দিনের রিলেশন তোমাদের?
- এইতো ভাইয়া এক সপ্তাহ হবে।
- ভাইয়া একটা কথা বলি? কিছু মনে করবে না
তো?
- জ্বী.... ভাইয়া, বলুন?
- তুমার আব্বু কী করেন?
- আমার আব্বুর রাজশাহীতে একটা ব্যবসা, দুইটা ফ্ল্যাট আর
সাহেব বাজারে তিনটা দোকান।
- মাশঅাল্লাহ্! অনেক বড়লোক তোমার আব্বু।
- ভাইয়া আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?
- কেউ না আমি। যাও ভাইয়া......
.
ছেলেটার আব্বু অনেক বড়লোক। সারাজীবন
বেঁচে থাকুক ওদের ভালবাসা।ওদের
ভালবাসার মাঝে আর কখনও কাঁটা হয়ে
দাঁড়াবো না। মনটা এখনও তামান্নার জন্য কষ্ট
পায়। যদি, ফিরে পেতাম আগের সেই দিনগুলো!
.
বাসায় এসে শুয়ে আছি আর চোখে বার বার
ভেসে আসছে তামান্না আর ঐ ছেলেটার দৃশ্য।
মনকে অনেক করে বুঝানোর চেষ্টা করতেছি "সব
কিছু ভুলে যাও,কেনো মিথ্যা মায়া
বাড়াচ্ছো"। হঠাৎ করেই বোনটা এসে
ডাকতেছে........
- কী রে ভাইয়া, খাবি না?
- তুই খেয়েছিস?
- না। তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
- তুই যা,,,আমি আসতেছি।
- ভাইয়া তোর মন খারাপ?
- না রে, এমনি।
- ভাইয়া তুই এখনও তামান্নার জন্য কষ্ট পাস?
- বাদ দে না ওর কথা?
- একটা কথা বলি ভাইয়া?
- হ্যাঁ। বল?
- সেইদিন না তামান্না আপু অামাকে অনেক
গুলো কথা বলেছে?!
- কী বলছে তোকে?
- আমরা মধ্যেবিত্ত বলে কী সবাই আমাদের কথা
শুনাবে?
কথা গুলো বলতে বলতেই বোনটা আমাকে
জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
- এই পাগলী কাঁদছিস কেনো? চল, এবার
খাবি......।
.
না জানি আমার বোনটাকে তামান্না কী কী
বলেছে? বোনটার চোখের পানি একদমই সহ্য
করতে পারি না। তখনই ইচ্ছা করছিল,,এইসবের
প্রতিশোধ নেয় বড়লোকের মেয়ের কাছে
গিয়ে। মধ্যেবিত্ত বলে কী আমরা মানুষ না?
আমাদের মধ্যে কি মন নেই? নাকি আমরা
পাথর?????
.
. কিছু দিন পর, হঠাৎ করেই খুব বেশি অসুস্থ হয়ে
পড়েছিলাম। আগে থেকেই আমার সমস্যা ছিল,
মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তাম। কিন্তু, সেইবার
এত্তো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম যে, আট/নয়
দিন বিছানা থেকে উঠতে পারি নি।
- চল ভাইয়া তোকে কত করে বললাম, চল তোরে একটু
ডাক্তার দেখাইয়ে নিয়ে আসি।
- আমার জন্য কেনো এত কষ্ট পাস তুই?
- ভাইয়া? আমি তোর নিজের মায়ের পেটের
বোন না??
- কেন আমার জন্য এত কষ্ট পেয়ে কি হবে, বল? যে
মানুষ আমার জন্য সারাক্ষণ কষ্ট পেতো, আজ দেখ, সেই
মানুষ টা আমার জন্য আর বিন্দু মাত্র কষ্ট পায় না!
- ভাইয়া রে, দুনিয়ার মানুষ এমনই।
- হুম রে। দেখ না, আল্লাহ্ আম্মুকে অাগেই
নিয়ে, আমাদের একা করে দিয়েছে।
- আচ্ছা ইয়া তুই তাও আম্মুর আদর যত্ন পেয়েছিস।
আমি তো সেটাও পাই নি।
- আজ আমাদের সাথেই কেন এমন হয়, বল তো আপু?(চোখ
দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়ছিল আমার)
- ভাইয়া! আবার কাঁদছিস!! আমি কিন্তু তোকে
কিছু একটা বলছিলাম?
- কী বলছিলি?
- তুই কবে ডাক্তার দেখাবি?
- ভাল লাগে না রে। এবার একটু সুস্থ হয় সিউর
ডাক্তারের কাছে যাবো।
- তুই তো সব সময়ই এইকথা বলিস? একবারও তো যাস্
না??
- আব্বু কই রে?
- ভাইয়া কথা ঘুরালি, তাই না?
- না রে! এবার তোকে সঙ্গে করেই ডাক্তারের
কাছে যাবো, প্রমিস?
- হুম। এবার আমার কথা না শুনলে সত্ত্যিই আমার
মাইর খাবি কিন্তু।
- পাগলী বোন আমার। কাছে আয় একটু আদর করে
দেই।
.
বোনটাকে পিচ্চি রেখে আম্মু মারা যায়। সেই
পিচ্চি থেকেই বোনটাকে আদর দিয়ে বড়
করেছি, কখনও ওকে আম্মুর ভালবাসার অভাবটা
বুঝতে দেয় নি। আব্বুর তো সারাদিন হাই স্কুলেই
থাকতে দিন শেষ!
- আচ্ছা ভাইয়া আমি আরেক বার তামান্না আপুর
সাথে কথা বলবো?
- না রে, থাক। দরকার নাই।
- তাহলে এত কষ্ট পাচ্ছিস কেনো?
- বাবা আজ তৃতীয় শেণ্রীর কর্মচারী বলে,
আমাদের কেউ দাম না রে!
- আচ্ছা, আমি কি একবার কথা বলি না তামান্না
আপুর সাথে, সমস্যা কি।
- তামান্না আমাকে ভালবাসে না রে। ও মান
সম্মান আর টাকাকে ভালবাসে।
- তুই নিজেই একবার কথা বল না?
- যে মানুষ তোর ভাইয়াকে এতটা অবহেলা
করলো, সেই মানুষটার সাথে কথা বলতে
বলতেছিস?
- আমাকেও ওইদিন অনেক গুলো কথা শুনিয়ে
দিয়েছিল রে!
- তারপরেও, তুই সেই মানুষটার সাথে কীভাবে
কথা বলতে চাস্?
- তাহলে, বল, আর কষ্ট পাবি না কখনও?আর,
ডাক্তার দেখাবি??
- আচ্ছা,আর কষ্ট পাবো না কখনও।
.
আদরের বোনটাকে যতই বলি কষ্ট পাবো না,
কিন্তু, প্রতিটা সেকেন্ড অবহেলা গুলো
ভিতরটাকে শেষ করে দিচ্ছে। ভিতরের
অার্তনাদ তো কাউকে দেখানো যায় না।
আল্লাহ্, আজ মধ্যেবিত্ত বলে কী সবকিছু থেকে
বঞ্চিত করছো আমাদের?
.
এই সামান্য একটু সুস্থ হলে ঘর থেকে বের হয়ে,
এলাকার ছেলেদের আড্ডায় গেলাম। এতদিন
তো আর রুমের ভিতরে থাকা যায় না। একা
একা থাকলে আরও বেশি খারাপ লাগে।
, ঐ দিন বাসায় ফিরতে একটু দেরিই হল।
বাসায় ঢুকতেই বোনটা এসে সামনে
দাড়াল......
- ভাইয়া তুই ঠিক আছিস তো?
- হ্যাঁ। কেনো কী হইছে?
- তোকে কেমন যেন লাগছে!
- কই?আমি তো ঠিকই আছি।
"ঠিকই আছি" বলতে বলতেই বোনটার সামনেই
পেটের ভিতর যা ছিল, সবকিছু বের করে
দিলাম।
- তুই কী কিছু খেয়ে আসছিস ভাইয়া?
- না রে।
- কিরে তোকে না কত বার বলছি, উল্টা পাল্টা কিছু
খাবি না, কেনো শুনিস না আমার কথা?
- কিছুই খেয়ে আসি নি রে।
- আবার মিথ্যা কথা বলিস? তোর এই অসুস্থ শরীর
নিয়ে বার বার কেনো এইসব খাইতে যাস্?
- আমার খুবববউ কষ্ট হয় রে।
- তুই যে সুযোগ একটু পেলেই এইসব খেয়ে আসিস,
আমার কষ্ট লাগে না?
- (..........)
- কিরে আমি তোর কেউ হই না, তামান্নাই তোর সব
না????
- কী দোষ ছিল আমার?
- কিরে এই সব খাইলেই কী তুই আর কষ্ট পাবি না?
- (..............)
- ভাইয়া আমার দিকে তাঁকা??
- হ্যাঁ, বল?
- এক্ষুণি বল, কখনও আর এসব খাবি না?
- আইচ্ছা।
- দেখ তোর যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমি
কিভাবে বাঁচবো বলতে পারিস ভাইয়া?
- কেনো রে,,,আমি তো তোর শুধু ভাইয়াই হই!!
- ছোট বেলায় আম্মুকে হারিয়ে, আম্মুর
আদর,যত্ন,ভালবাসা কিছুই পাই নি। বড় হয়েছি
তোর ভালবাসায়, হাসতে শিখেছি তোর
ভালবাসায়, কাঁদতে শিখেছি তোর
ভালবাসায়। আর সেই মানুষটাকেও হারাতে
হবে আমার??
- আমায় ছাড়া থাকতে পারবি না?
- অসম্ভব। এক সেকেন্ডও না।
- আমি যদি কখনও হারিয়ে যাই?
- তবে তার আগেই যে আমি তোকে খুঁজে বের করবো।
- এত্ত ভালবাসিস কেন আমারে, বল তো?
- কারন, তুই যে আমার পৃথীবির সব!
পাগলীটাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। বোনটা
আমার এইসব দেখে সেই প্রথম থেকেই কাঁন্না
করছে।
.
পরিশিষ্টঃ রক্তের মানুষগুলো সারাজীবন
আপনার জন্য এইভাবেই কষ্ট পেয়েই যাবে।
কিন্তু,
দূরের কাউকে যতই রক্তের মানুষ ভাবেন না
, কখনও কি আপনার জন্য মন থেকে কষ্ট পায়
না। একসময় আপনাকে ছাড়া দিব্বিই ভাল
থাকবে আর আপনাকে অবহেলা করবে। এটাই
দুনিয়ার নিয়ম।
Post a Comment