মেয়েটির নাম মিথিলা , তার বাবা মা
কেউ নেই । জন্মের পর মা মারা যান ।
তারপর তার বাবা আরেকটি বিয়ে করে
মিথিলা কে ছেড়ে চলে যান । মেয়েটি
তার দাদার কাছে মানুষ হয় ।
বছরখানেক আগে তার দাদা মারা যান । মেয়েটি তার কাকার কাছে থাকে ।
এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে । ও
শারীরিক ভাবে খুব অসুস্থ ।প্রায় অসুখ
লেগেই থাকে । একদিন ধরা পড়লো তার
হার্ট ব্লক হয়েছে । স্কুল জীবনে
মেয়েটি খুব চঞ্চল ছিলো । যখন বুঝতে পারলো তার মা জন্মের পর মারা গেছে ।
আর তার বাবা তাকে দুরে সরিয়ে
রেখেছে তখন থেকেই মেয়েটি আধমরা
হয়ে যায় । দাদা ছিলো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড
। তিনি মারা যাবার পর থেকে মেয়েটি
নিস্স হয়ে যায় । তার কোন বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলো না । হঠাৎ একদিন রাতে তার
হার্টে খুব ব্যাথা শুরু হয় । তখন মেয়েটি
ভাবতে থাকে যদি তার মা বেচে থাকতো
। তাহলে ওর সেবা করতো । মেয়েটি তার
একাকিত্বতা কাটানোর জন্য একটা
ফেসবুক আইডি খুলে । মন খারাপ হলেই ও ফেসবুকে আসতো । কিছুদিন যাওয়ার পর
ওর একটা ছেলের সাথে পরিচয় হলো । ওর
নাম ছিলো তানিম । তানিম কে পেয়ে
যেনো মিথিলার একাকিত্বতা
একেবারেই কেটে গেলো । তানিম কে ও
এতটাই আপন ভাবতো যে ওকে আত্মার ফ্রেন্ড বলতো । তানিম জিজ্ঞেস করলেই
সে বলতো ওর বাবা , মা , ভাই , বোন সব সে ।
তানিমের সাথেই শুধু চ্যাট করতো । অন্য
কেউ নক করলেও রিপ্লাই দিতো না । ওর
মাধ্যমেই পরিচয় হলো ওর বেষ্ট
ফ্রেন্ডের সাথে । যখন তানিম ওর সাথে কথা বলতো না অথবা অন লাইনে থাকতো
না তখন । তখন ওর ফ্রেন্ড কে জালিয়ে
মারতো । তানিম কই , খাইসে কিনা ,
গোসল করসে কিনা , নামাজ পড়সে কিনা
ইত্যাদি ইত্যাদি । এভাবে খোজ নিতেই
থাকতো । মিথিলা যেনো তানিম কে পেয়ে মহা খুশি । যেনো ওর অপ্রাপ্তি
বলতে আর কিছুই নেই । মিথিলার
কেয়ারিং দেখে তানিম ভেবেই নিলো
মিথিলা ওকে ভালোবাসে , এবং তার
ফ্রেন্ড কে ও জানালো । এক দিন হঠাৎ এক
অপরিচিত আইডি থেকে মেসেজ করে বলে । আপনি যাকে ভালোবাসেন । সে আপনাকে
ভালোবাসেনা শুধু মজা করে । মিথিলা
কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে নি ।
কিন্তু, বিশ্বাস করেও নি ও সব কিছু তানিম কে
জানিয়ে দেয় । তবে তানিম সত্যি সত্যি
মিথিলা কে পরিহার করতে থাকে । এর মাঝে মিথিলার হার্টে রিং বসানো হয়
। তবে তানিম ওর পাশে ছিলো না ।
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে
তানিমের সাথে কথা বলার অনেক
চেষ্টা করে । কিন্তু তানিম পাত্তা দেয়
না । অবশেষে ওর ফ্রেন্ড কে অনেক রিকোয়েস্ট করে হাত পা ধরে মেসেজ
করে যেনো তানিম ওর সাথে কথা বলে,
কিন্তু কোন লাভ হয়নি । তানিমের কাছে
মিথিলার সবশেষ এসএমএস টা ছিলো
এরকম :
: তানিম , আমারতো কেউ নেই, তুমি আমার সব । মা বাবা ভাই বোন আমার পৃথিবী
কিন্তু তুমি । আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি
তাহলে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও
তোমার পায়ে পড়ি , তবুও একটি বার
আমার সাথে কথা বলো । জানো তানিম
যখন তুমি আমার ছিলে না , তখন প্রতি রাতে আব্বু আম্মুর জন্য কেদে কেদে রাত পার
হয়েছে । তুমি আসার পর থেকে মনে হচ্ছে
আমার সবই আছে । এখন যদি তুমিও চলে
যাও , তবে আমার বাবা মার সাথে আরো একটি
নাম যোগ হবে, তানিম । প্লিজ আমার এই
পৃথিবীতে বেচে থাকার ইচ্ছেটুকু কেড়ে নিও না । তবুও কোন রিপ্লাই আসেনি
তানিমের ।
তারপর ফেসবুকে ওর প্রোফাইল থেকে
কনটাক্ট নাম্বার নিয়ে কল করে সেটাও
অফ । তাই আবার ওর ফ্রেন্ড কে মেসেজ
করে ওর নাম্বার দিতে । ওর ফ্রেন্ডের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে কল করলে
রিসিভ করে বলে রং নাম্বার । মিথিলা
তারপব বার বার কল করে কেদে কেদে বলে তুমিই
তানিম , কিন্তু সেই একি কথা রং
নাম্বার ।
কি আর করার একসময় মিথিলা মেনেই নিলো এটা রং নাম্বার । কিন্তু ফ্রেন্ড
কিন্তু যখন আত্মার, তাই ওর জন্য দম বন্ধ হয়ে
আসে । এই জন্য আরেকটি ফেসবুক আইডি
খুলে ওর সাথে কথা বলার জন্য । তারপর
একটা চ্যাটিং গ্রুপ খুলে, তানিম আর ওর
ফ্রেন্ড নিলয় কে এড করে । ওরা দুজনেই ওকে রিকোয়েস্ট পাঠায় । এক্সেপ্ট করার
পর ওদের সাথে ইনবক্সে কথা বলে । এক
পর্যায়ে নিলয় ওকে প্রপোজ করে, ওরা
কেউ জানতো না এই মেয়েটি সেই
মিথিলা । মিথিলাও তানিমের সাথে
একটু কথা বলার জন্য নিলয়ের প্রপোজ এক্সেপ্ট করে দুই ফ্রেন্ডের সাথেই কথা
বলে । এক সময় তানিমের ওপর কেয়ারিং
দেখে নিলয় ধরে ফেলে এটা মিথিলা ।
নিলয় ওকে জিজ্ঞেস করার পর মিথিলা
সব সত্যি বলে দেয় । নিলয় খুব কষ্ট পায় ।
কিন্তু ও যাকে এতোদিন ওর জিএফ ভাবতো সেই মেয়েটি মিথিলা, আর সবাই জানে
মিথিলা তানিম কে ভালোবাসে । কিন্তু
একমাত্র মিথিলাই জানে তানিম কে বি
এফ না আত্মার ফ্রেন্ড হিসেবে জানে ।
তখন মিথিলা আবারো কষ্টের সাগরে
তলিয়ে যায় । তানিম আর এই আইডিতে ও কথা বলেনা । কিন্তু নিলয় বার বার
শান্তনা দেয় । ফোন করে তানিম এর সব
তথ্য জানিয়ে দেয় । তানিম একটি মেয়ে
কে খোব লাভ করে আর তার সাথে সারাক্ষণ
চ্যাট করে । তাই মিথিলা কে ব্লক
দিয়েছে । সেদিন যখন মিথিলা ওকে ফোন করেছিল , সেটা রং নাম্বার ছিলো
না । তানিম কল রিসিভ করে নিলয় কে
দিয়ে দিতো কিন্তু নিলয় তাই ও বলতো রং নাম্বার
। মিথিলা তখন বুঝতে পারলো তার এতো
কান্না তানিম যে , কান পেতে শুনেও
ফোনটা হাতে নেয়নি । শুধু মজা করেছে , ও আর যাই হোক মিথিলার ফ্রেন্ড হতে
পারে না । এদিকে নিলয় হাত কেটে
মিথিলার নাম লিখেছে, কারণ ও সত্যি
সত্যিই মিথিলাকে ভালোবেসে ফেলেছে
। কিন্তু ড় দুই দিন পর মিথিলা নিলয় কে মেসেজে
নক করে এবং নতুন করে নিজে নিলয় কে প্রপোজ করে । কারণ তানিমের জায়গা
টা ফাকা থাকলে যে , মিথিলা বাচতেই
পারবেনা । নিলয় তো হাসি মুখে তা মনে
নেয় । নিলয় এখন খুব কেয়ার করে
মিথিলার । নিলয় খুব ভালো ছেলে ।
তাদের একজনকে ছাড়া অন্য জনের দম বন্ধ হয়ে আসে । কিন্তু অপারেশনের
পরেও মিথিলার হার্টের ব্যাথা ভালো
হয়নি । এখন প্রায় সময়ই ব্যাথা
অবচেতন হয় । এখন মিথিলা সারাক্ষণ
ভাবতে থাকে ওর কিছু হয়ে গেলে নিলয়
কি করে থাকবে । তাই নানান ভাবে চায় নিলয়ের কাছ থেকে দুরে সরে যেতে ।
কিন্তু নিলয়ের ভালোবাসার কাছে হার
মেনে কিন্তু তারপরেও বার বার ওর কাছে ফিরে আসতে হয়
। এখন মিথিলার একটাই চিন্তা, নিলয়
কে বিয়ে করা । তাহলে ওপারে গিয়েও
বলতে পারবে, নিলয় ওর স্বামী । আবার ভাবে বিয়ের পর ও না থাকলে নিলয়
বাচবে না । তাই এখন নিলয়ের সাথে
ব্রেক আপ করবে .....??? না কি করবে ভেবে
মিথিলা পাগল হয়ে গেছে ।
,
, ,
Post a Comment