আমি, রিক্সায় করে কলেজের সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম.. ক্লাসের এখনো সময় আছে এর জন্য ক্যাম্পাসে বসে বই বের করে পড়তে শুরু করলাম.
তখন আমার ক্লাসমেট গুলো আমাকে দেখে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে.. ইভা নামের একটা মেয়ে বলে বসলো.
ইভা--এই সব পাগল ছাগল কোথা থেকে আসে জানি,দেখ তোরা এখন ক্যাম্পাসে বই পড়ছে দেখতে একদম ভুতের মতো।
ইরা--তুই ঠিক বলেছিস, আমাদের ক্লাসে সবাই এতো সুন্দর দেখতে কিন্তু এই ছেলে দেখতে ভুতের মতো,
মিরা--হা হা তাদের কথা শুনে হাসি পাচ্ছে, আমি আর নিতে পারছি না.. আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি জানি আমার কথা বলা বিপদজনক হয়ে যাবে..
ইভা--দেখ দেখ ভুতটা আমাদের কথা একবারও কানে নিচ্ছে না..
মিরা--ভুত হা হা,চল এখন অনেক হেসেছি ক্লাসের স্যার চলে আসবে.?মনেহয় ওরা সবাই চলে গেল আমি বসা থেকে উঠে ক্লাস রুমে দিকে হাঁটতে শুরু করলাম কিছুক্ষণ পর ক্লাস রুমে এসে পিছনের দিকে গিয়ে বসলাম.. কিছুক্ষণ পর স্যার এলো.
স্যার--সবাই পড়া বের করো..?
সবাই--জি স্যার..
স্যার--ইমন পড়া দাও.?
ইমন--স্যার হয়েছে কি পড়া করেছিলাম কিন্তু মনে নয়,
স্যার--ঠিক আছে আজ প্রথম তাই কিছু বললাম না, দুই তিন জন পরে আমাকে বললো, এই যে কালু পড়া দাও, আমি আশেপাশে দেখছি কালু কে তখন স্যার বললো আশেপাশে কি খুঁজছো তোমাকে বলছি,
সবাই-- সবাই এক সাথে হেসে উঠলো হা হা হি হি, আমি উঠে দাঁড়ালাম..
আমি--জি স্যার আমার নাম কালু নয় হাবিবুর রহমান। আবার সবাই হাসতে শুরু করলো মনে হচ্ছে ক্লাস রুমে হাসির প্রতিযোগিতা চলছে.
স্যার--এই সবাই হাসি বন্ধ করো, কথায় কথায় হাসির কি আছে। তোমার নাম যাই হোক এখন তুমি পড়া দাও.?
আমি--জি স্যার, আমি সব পড়া গুলো ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম..
স্যার--বাহ তুমি দেখতে কালো হলে পড়া দেওয়ার ধরন অনেক আলাদা.. আবার ক্লাস রুমে হাসির রোল পড়ে গেল।
তখন আমি বসে পড়লাম, স্যার পড়া দিয়ে চলে গেল,
আজ ক্লাস হবে না অফ পিরিয়ড আছে এই দিকে পানির পিপাসা লেগেছে তাই ক্যান্টিনে এসে পানির বোতল কিনে মুখটি খুলছি তখন একজন আমার কাছ থেকে বোতল নিয়ে পানি খেতে শুরু করলাম..
আমি--ভাই এটা কি হলো..?
রনি--কি আর হবে তুই পানি কিনলি আমরা খাচ্ছি সমস্যা কোথায়.
রবি--আরে তুই সব পানি খেয়ে নিস না আমার জন্য একটু ও রাখিস।
রনি--তোর জন্য রাখছি, এই নে পানি খেয়ে নে, ওরা দুজন পানি খেয়ে খালি বোতল দিয়ে চলে গেল..
আমি--মামা আরেক টা পানির বোতল দেন..?
দোকানদার--আচ্ছা, মামা পানির বোতল দিলো আমি পানি খেয়ে, গাছের ছায়ায় এসে বসলাম।
আমি--বাহ এখানে অনেক ঠান্ডা আছে দেখছি, আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে নিউউ ফেড দেখছি, তখনি মিরার গলা পেলাম..
মিরা--ভুতে দেখি আবার মোবাইল চালাই, এই তোরা দেখ ভুতটা এখানে বসে আছে..
রিয়া--ভুত তোরা ওকে এই নাম কখনো দিলি..?
ইভা--আমি দিয়েছি, এই যে এখন থেকে উঠে অন্য জায়গায় যাও আমরা বসবো..
রিয়া--থাক না সমস্যা কোথায়..?
ইরা--বুঝতে পারছিস না অন্য ছেলে মেয়েরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে বলবে দেখ ভুতের সাথে সব গল্প করছে..
আমি--সরি আমি বুঝতে পারিনি আপনারা এখানে বসবেন,
আচ্ছা পনারা বসেন আমি অন্য জায়গায় যাচ্ছি আমি উঠে ক্লাস রুমে এসে বসলাম।
তার পর ক্লাস শেষ করে বাড়িতে এলাম,
তারপর ফ্রেশ হয়ে খেতে শুরু করলাম কিছুক্ষণ পর খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লাম, হঠাৎ দরজায় ঠক আওয়াজ হলো আমি দরজা খুলে দেখি কাজের বুয়া..
বুয়া--ভাইয়া আপনি আজ বাইরে বের হতে পারবে না..
আমি--হুম, নিশির বার্থডে পার্টি আছে..?
বুয়া--জি, ভাইয়া আমি আর আপনার কষ্ট নিতে পারছি না,কত বছর ধরে আপনাদের বাড়িতে কাজ করছি কিন্তু কোন দিন দেখলাম না আপনার বাড়ির কেউ কথা বলছে.
আমি--সমস্যা নেই, আপনি বলে দিবেন আমি রুম থেকে বের হবো না..
তারপর বুয়া চলে গেল আমি দরজা দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম, আমাকে কোন পার্টিতে অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হয় না,
কারণ আমি কালো পরিবারের সম্মান নষ্ট হবে। আমি বেড থেকে উঠে বাইরে এলাম জানি আজ কপালে খাবার ছুটবে না,
দোকানদার--কি ভাতিজা তোমার কি খবর.?
আমি--জি ভালো আছি,
দোকানদার--বাড়িতে দেখছি অনুষ্ঠানে আয়োজন চলছে বাড়িতে কিসের অনুষ্ঠান..?
আমি--নিশির জন্মদিনে অনুষ্ঠান আছে, পার্টিতে অনেক কাজ আমার.
দোকানদার--সেতো বুঝতে পারছি এতো বড় বাড়ির একমাত্র ছেলে তুমি,সব দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে..
আমি--জি, আমি আর কথা বাড়াতে চাইলাম না, এলাকার সবাই জানে আমি অনেক সুখে থাকি কিন্তু ভিতরে খবর কেউ জানে না..চাচা রুটি আর কলা দেন..?
দোকানদার--কি হবে.?
আমি--প্যান্ডেলের লোক জন কে দিতে হবে..?
দোকানদার--আচ্ছা দিচ্ছি, আমি রুটি আর কলা নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখি প্যান্ডেলের কাজ প্রায় শেষ, আমি রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম, সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠলাম পার্টিতে গান বাজনার শব্দে..
আমি--বুঝি না,এরা যে এত জোরে গান বাজনা করে কেন, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসলাম কিন্তু পার্টির বাজনার শব্দে পড়তে পারছি না, তবুও আমি কিছুক্ষণ পড়ে রুটি আর কলা খেয়ে শেষ করে, জানালা দিয়ে পার্টি দেখছি..
আব্বু--সবাইকে ধন্যবাদ আপনারা আমার একমাত্র মেয়ে জন্মদিনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন,এক ভদ্রলোক বললো..?
ভদ্রলোক--তা ভাই আপনার ব্যবসা কেমন যাচ্ছে..?
আব্বু--চলছে ভালো, কই নিশি কে নিয়ে আসো..?
আম্মু--নিশি রুমে ওর বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে এখনি চলে আসবে,ঐ তো চলে এসেছে..
নিশি--আব্বু আমাকে ভালো গিফট না দিলে আমি কিন্তু কেক কাটবো না,
আব্বু--তোর জন্য গিফট নিয়ে এসেছি, তোর পছন্দের গাড়ি।
নিশি--সত্যি..! এখন কেক কাট, তার পর নিশি কেক কেটে আম্মু কে আর আব্বু কে খাইয়ে দিলো.. হঠাৎ একজন বলে উঠলো.
ভদ্র লোক--স্যার আপনার ছেলেকে দেখছি না শুনেছি আপনার একটা ছেলে আছে, কিন্তু আপনি কোনো দিন তাকে সামনে আনলে না কেন..?
আমি--এই রে এখন আব্বু উত্তর কি দিবে, আব্বু আম্মুর তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কি বলবে..?
আরেক জন--স্যার বলুন..?
আব্বু--আসলে আমার ছেলে অফিসের কাজের জন্য বিদেশে গেছে একটু আগে তাই আপনাদের সাথে দেখা হয়নি।
ভদ্র লোক--ওহ ঠিক আছে স্যার, একদিন সবাই আপনার ছেলের সাথে দেখা করতে আসবো.
আব্বু--ঠিক আছে, কিছুক্ষণ পর খাওয়া দাওয়া শেষ হলো সবার, আমি জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম,
তার পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে প্রতিদিনের মত জানালার কাছে থেকে নাস্তা নিয়ে খেতে শুরু করলাম,
কিছুক্ষণের মধ্যেই খাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলাম,
আমি--বাহ কত সুন্দর একটা গাড়ি নিশি গিফট পেয়েছে, হঠাৎ নিশি বলে উঠল.
নিশি--কি দেখিস, গাড়ি দেখে কি হবে তোর, দেখছিস কত দামী গাড়ি পেয়েছি, আমি কলেজে যায় গাড়িতে করে আর তুই রোদে পুড়ে,
আমি--হুম,ভালোই লাগে রিক্সায় যেতে..
নিশি--তুই গাড়ি চড়ে পারিস না কারণ তুই কাল্লা, এখন গাড়ির কাছ সরে যা আমি কলেজে যাবো..
আমি--ড্রাইভার নিশি কে সাবধানে নিয়ে যাবেন, আমি আর গাড়ির কাছে দা দাঁড়িয়ে গেট দিয়ে বের হলাম,
আর এই দিকে আমার কাছে যা টাকা ছিলো তা সব শেষ হয়ে গেছে তার জন্য এই রোদ্দুর হাঁটতে শুরু করলাম,
কিন্তু রীর ঘামে ভিজে গেছে, এই ভাবে আর পারা যায় না যাই হোক কস্ট করে একটা টিউশনি দেখতে হবে।
Post a Comment